Check the latest articles now Click Here!

গণতন্ত্র ও ভারতীয় মুসলমান


1947 সালে স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের ভারতে গণতণ্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং one man one vote one value এই নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ আমাদের দেশে গণতণ্ত্র কার্যকর আছে বলেই প্রতি 5 বছর অন্তর লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়৷ আমাদের ভারতে গণতাণ্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, সে জন্য আমরা আমাদের ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতাণ্ত্রিক দেশ বলে গর্ববোধও  করি৷ এবং  আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে অভিনন্দন জানাই, যারা আমাদের জন্মের পূর্বেই আমাদের দেশকে বিদেশী ইংরেজদের হাত থেকে স্বাধীন করে আমাদের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে, গণতাণ্ত্রিক ব্যবস্থার প্রচলন করে গেছেন৷ আজ আমরা আমাদের দায়িত্ব কতটা সাফল্যের সঙ্গে পালন করতে পারছি অথবা ব্যর্থ হচ্ছি তাও আমরা স্বচক্ষে দর্শন করছি৷ 

        ★    এখন আমি স্বাধীন ভারতে মুসলমান সমাজের নেতৃত্বের পক্ষ থেকে গণতণ্ত্রের সঠিক প্রয়োগ বিষয়ে এবং  মুসলমানদের উন্নতি বা অবনতির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা  করার চেষ্টা করব৷ আমার এই প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য হল— স্বাধীন ভারতে মুসলমানদের বর্তমান দুরাবস্থার জন্য প্রকৃত দায়ী কে বা কারা ? সেটা চিহ্নিত করা৷ বিষয়টির গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান করা এবং বিষয়টির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য উন্মোচন করা৷ এই ব্যর্থতার জন্য মুসলমানরা নিজেরা দায়ী অথবা অ-মুসলমানরা দায়ী ? মুসলমানদের ধর্মীয় নেতা হাফেজ-কারী-আলেম-মওলানা-মৌলুবী-মুফতী-পীর-মুহাদ্দেস-মুহাক্কেক-মুফাস্সেরগণ কি দায়ী ? মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত B.A. B.Sc. B.Com., M.A. M.Sc. M.Com. পাশকরা উচ্চ ডিগ্রীধারী ব্যক্তিগণ, রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক  নেতৃবৃন্দ কি দায়ী ? দায়ী কি হিন্দুরা ? ব্রাহ্মণরা ? শূদ্ররা ? ইংরেজরা ? পাকিস্তান ? চীন ? আমেরিকা ? কে বা কারা মুসলমানদের উন্নয়ণের পথে প্রধান অন্তরায় ? এ ব্যপারে আমাদের নিঃসন্দেহ হওয়া প্রয়োজন৷ স্বাধীন ভারতে আমাদের চোখের সামনে সমস্ত অ-মুসলমানদের উন্নতি হল কিন্তু শুধুমাত্র মুসলমানদের উন্নতি হল না কেন ? এটা এখন গবেষকদের নিকট কোটি টাকার প্রশ্ন৷ তফসিলী জাতি (Sc), তফসিলী উপজাতি (St), অনগ্রসর শূদ্র জাতি (Obc), শিখ, খৃষ্টান, বৌদ্ধ ও জৈন্যদের ( Minorities) শিক্ষা, চাকুরী, গাড়ী, বাড়ী, ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি-জায়গা,মান-সম্মান, ক্ষমতা, অধিকারসহ বিভিন্ন ধরণের সুযোগ-সুবিধা লাভ করে আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদা সহকারে জীবন যাপন করতে পারল৷ তাহলে শুধুমাত্র মুসলমানদের উন্নতি হল না কেন ? কারা এদের উন্নয়ণের পথে বাধা দিল ? প্রকাশ্যে না অপ্রকাশ্যে  ? কোন্ কোন্ দল বা পার্টী বা গ্রুপ মুসলমানদের উন্নতির পথে অন্তরায় ? এ সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের গবেষণা করা একান্ত প্রয়োজন৷ রোগের কারণ বা ইতিহাস জানতে না  পারলে সুচিকিৎসা হওয়া অসম্ভব৷ 

         ★★   স্বাধীন ভারতের সংবিধানের 15 (1) ধারায় মৌলিক অধিকার হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, " কেবল ধর্ম, জাতি, প্রজাতি, লিঙ্গ, বা জন্মস্থানের হেতুতে অথবা তন্মধ্যে কোন একটিরও হেতুতে রাজ্য (state) কোন নাগরিকের প্রতিকূলে বিভেদ করিবেন না৷ " এই মৌলিক অধিকারে যা বলা হয়েছে স্বাধীনতার 69 বছরে তা পূর্ণ করা হয়নি৷ তাহলে এর জন্য আমরা কি ভারতের শাসক শ্রেণী অর্থাৎ ব্রাহ্মণ জাতিকে কর্তব্যে অবহেলা করার দায়ে দায়ী করতে পারি ? শাসক হয়ে সংবিধানে নির্দেশিত কর্তব্য পালন  না করে, কর্তব্য পালনে অনীহা প্রকাশ করার জন্য অধিকার বঞ্চিত মুসলমান সমাজের পক্ষ থেকে শাসকদের বিরুদ্ধে গণতাণ্ত্রিক পন্থায় প্রতিবাদের কোন ব্যবস্থা, প্রতিকারের সরল পন্থা গ্রহণ করা হয়েছিল কি ? যদি না হয়ে থাকে তাহলে তা করা হয়নি কেন ? 

          ★★★   কিন্তু এর পরের প্রশ্নটি আরো ভয়ঙ্কর৷ সেটি হল এই যে— আমাদের ভারতে গণতণ্ত্র আছে৷ প্রতি 5 বছর অন্তর নিয়মিত বিধানসভা এবং লোকসভার নির্বাচন হয়৷ অন্যান্য সকলের সঙ্গে আমরা মুসলমানরাও প্রকাশ্যে মহা ধুমধাম করেই ভোট দিই৷  দেশের অধিকাংশ জনগণ যে দলকে ভোট দেয় সেই দলই নির্বাচিত হয় এবং তারাই রাজ্যে রাজ্যে বা কেন্দ্রে সরকার গঠন করে থাকে৷ আমরা সকলেই জানি যে, কংগ্রেসের আমলে কংগ্রেস, বামফ্রণ্টের আমলে সিপিএম এবং এখন তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে মমতা ব্যানার্জী  নিজেই প্রচার করে থাকে যে, মুসলমান প্রদত্ত ব্যাপক ভোটেই আমরা বিজয় লাভ করেছি৷ ভারতে মুসলমানদের সংখ্যাও  কিন্তু কম নয়৷ গোটা দেশে প্রায় 15 % জনগণ মুসলমান৷ আবার বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যে মুসলমানদের সংখ্যা আলাদা আলাদা৷ যেমন আসাম রাজ্যে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় 28 % , পশ্চিম বাংলায় 27 % , উত্তর প্রদেশে 19 % , বিহারে 17 % , গুজরাটে  9 % , মহারাষ্ট্রে 8 % মুসলমান৷ গোটা ভারতে প্রায় 40 টির মত লোকসভা আসন আছে,  যেগুলোতে মুসলমানদের সংখ্যা অর্দ্ধেকেরও বেশী৷ পশ্চিম বাংলায় প্রায় 70 টি বিধানসভার আসন আছে যেগুলিতে মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ তাহলে এই সমস্ত এলাকায় মুসলমানরা কাদেরকে বা কোন দলকে ভোট দেয় ? এবং কেন দেয় ? কি কি দাবীতে ভোট দেয় ? অথবা আদৌ মুসলমানদের কোন দাবী-দাওয়া আছে কি নেই ? মুসলমান বুদ্ধিজীবীরা এ ব্যাপারে কি বলেন ? 

            ★★★ যখন দেশ স্বাধীন হল,  ইংরেজরা বিদায় নিল এবং ব্রাহ্মণদের হাতে ভারতের শাসনভার অর্পিত হল,  তখন আমাদের মুসলমান বুদ্ধিজীবীগণ দেশের অন্যান্য সকলের মত নিশ্চয়ই  মুসলমানদের উন্নয়ণের কথা ভাবনা-চিন্তা  করেছিলেন৷ দেশ স্বাধীন হয়ে গেল, দেশে একটি পৃথিবী শ্রেষ্ঠ সংবিধান কার্যকর হল৷ আমাদের ভোটে আমাদের দেশ পরিচালিত হতে লাগল৷ আমাদের দেশের সংবিধানে অন্যান্য সকলের মত ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসাবে মুসলমানদেরও  উন্নয়ণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে অথচ 69 বছর পর মুসলমানদের উন্নতি হলনা৷ শুধু উন্নতি নয় বরং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আক্রমণ করে শত-শত নয় বরং হাজার হাজার মুসলমানদেরকে হত্যা করে সংবিধান বিরোধী কাজ করেও সেই ব্রাহ্মণরা অবলীলাক্রমে রাজত্ব চালিয়ে যেতে লাগল৷ আর মুসলমান জনগণ নয় বরং মুসলমান উচ্চ শিক্ষিত পণ্ডিতরা জালেমের পায়ে তৈল মর্দন করে তাদেরই দাসত্ব করতে থাকল যা আজও বর্তমান৷    

      ★★★★  অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, ব্রাহ্মণ সমাজে, শূদ্র সমাজে ভারতের আইন-কানুন, শিক্ষা, চাকুরী, অধিকার, ক্ষমতা ও সংবিধানের চর্চা যতটা হয় তার অর্ধেকও মুসলমান সমাজে হয় না৷ ফলে মুসলমান শিক্ষিত  সমাজ অসংগঠিত, অসচেতন হয়েই থাকল৷ অথচ আমাদের ভারতে গণতণ্ত্র আছে, নির্বাচন আছে, পুলিশ-মিলিটারী আছে, স্বাধীনতা-বাক স্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে, প্রতি বছর সরকার কয়েক  লক্ষ কোটি টাকার বাজেট পাশ করে৷ মিটিং-মিছিল হয়, ধরণা, ঘেরাও হয়, বিধানসভায় ও লোকসভায় আইন-কানুন পাশ হয়, ওয়াক আউট হয়, মিডিয়া আছে, মানবাধিকার সংস্থা আছে, এ্যামনেষ্টি ইন্টার ন্যাশনাল আছে, ইন্টারপোল আছে, মুখ্যমণ্ত্রী আছে, প্রধানমণ্ত্রী আছে, রাষ্ট্রপতি আছে, নির্বাচিত সরকার আছে,  তারপরও আমাদের অবস্থা পরাধীন ভারতের চেয়েও ভয়াবহ৷ আমাদের অবস্থা আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদের মত বরং তাদের থেকেও জঘন্য৷ আমাদের শিক্ষিত রাজনৈতিক নেতারা ব্রাহ্মণ নেতাদের ক্রয় করা গোলাম৷ ধর্মীয় নেতারা তাদের ইঙ্গিতে ও দয়া-দাক্ষিন্যে পরিচালিত আর মূর্খ জনগণ তো তাদের বিনা পয়সার গোলাম৷ এই অবস্থা থেকে মুক্তির পথ আমাদের বুদ্ধিজীবীদেরকেই আবিস্কার করতে হবে৷ অন্যথায় ভাগ্য বিপর্যয় ঘটবে৷
       ★★★★★ বিশ্ব বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক এ্যারিষ্টোটল বলেছেন— " যারা অপরের দ্বারা পরিচালিত হয় তারাই ক্রীতদাস৷ " উক্ত দার্শনিকের মতানুসারে ভারতের সিডিউল্ড কাষ্ট, সিডিউল্ড ট্রাইব ও অনগ্রসর শূদ্রদের মত মুসলমানরাও ব্রাহ্মণদের দ্বারা পরিচালিত হয় সুতরাং মুসলমানসহ সকলেই ক্রীতদাস৷


If you like this post, please don't forget to share it with others.
अच्छा लगे तो शेयर करना ना भूलें!
লেখাটি ভালো লাগলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.